তিন গোয়েন্দা: তিন গোয়েন্দার পরিচয় ও ভলিউম ১-১

আসসালামু আলাইকুম।
রকিব হাসান। আজও অনেক জনপ্রিয় একজন লেখক। বই পড়তে ভালোবাসে এমন খুব কম মানুষই আছে যারা এক নামে তাকে চিনে না। অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেছেন রকিব হাসান। সায়েন্স ফিকশন সমগ্র, ভিনগ্রহের দানব ইত্যাদি তার বিভিন্ন বইগুলো মূলত ভিনগ্রহবাসীদের নিয়েই লেখা হয়েছে। তবে তার জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ হলো তিন গোয়েন্দা। তিন গোয়েন্দা হলো তিনজন কিশোর। যাদের নাম প্রায় সকলেই জানেন কিশোর পাশা, মুসা আমান ও রবিন মিলফোর্ড। তারা শখের গোয়েন্দা। তিনজনেই থাকে আমেরিকার রকি বীচে। যদিও কেউই খাঁটিঁ আমেরিকান না। লস এেঞ্জলসে অবস্থিত রকি বীচ। হলিউড থেকে কয়েক মাইল দুরে। তিন গোয়েন্দা একটি কিশোর থ্রিলার ও একই সাথে গোয়েন্দা গল্প। এর উল্লেখযোগ্য দিক হলো ফেলুদা, ব্যোমকেশ আর শার্লক হোমসের গল্পের চেয়ে অনেক দীর্ঘ করে লেখা টেনে গেছেন লেখক। প্রায় প্রতিটি গল্প ৮০-১০০ পৃষ্ঠা। অথচ এত পৃষ্ঠার গল্পেও একঘেয়েমী আসার কোন সুযোগই রাখেননি রকিব হাসান।
https://www.dropbox.com/s/jycymrnmnfc9jwj/volume1-1.rar?m
ভলিউম-১, ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন

কিশোর পাশা

কিশোর পাশা এক বাঙালি কিশোর। তিন গোয়েন্দার গোয়েন্দা প্রধান। কোঁকড়াচুলো কিশোর পাশার সুন্দর চোখজোড়ায় তীক্ষ্ন বুদ্ধির ঝিলিক। তার বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন এক গাড়ী দুর্ঘটনায়। চাচা-চাচীর কাছে থাকে। চাচা-চাচী তাকে মা-বাবার স্নেহেই বড় করেছে। নিজের ছেলে বলেই তার চাচী মিস মারিয়া পাশা তাকে পরিচয় দেন। রহস্যে মাথা ঘামাতে ভালোবাসে কিশোর। অভিনয় করতে খুব দক্ষ। বোকার অভিনয় করতে পারে খুব ভালো। আর অন্যের কথা, মুখের ভঙ্গিও নকল করতে পারে। তবে কায়িক শ্রমে বেশি অভ্যস্ত নয় কিশোর পাশা। যেকোন কেসের সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। মাথার মধ্যে সারাক্ষণ চলে বিভিন্ন ভাবনা। তার গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো ভাবনার সময় মুখে চিমটি কাটা। খুব দ্রুত সব হিসাব মিলিয়ে জট খুলে বের করে রহস্যের সমাধান। প্রায়ই একটু বেশি ভাব দেখায়। দুই সহকারীর কথা কানেই তোলে না মাঝে মাঝে। অথচ এজন্য কখনই কোন বিপদে পড়ে না সে। যেন সব সময় সঠিক সিদ্ধান্তই নেয়। আর এই কারণেই গল্পে ঢাকা পড়ে যায় দুই গোয়েন্দা সহকারী। ঠিক এজন্যই অনেকেরই তুলনামূলক অপ্রিয় চরিত্র কিশোর পাশা। তবে আমার তেমন খারাপ লাগে না কিশোরকে।

মুসা আমান

আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এক কিশোর মুসা আমান, আমেরিকান নিগ্রো। মুসার বুদ্ধি আছে কি নেই সেটা বোঝা সত্যিই কঠিন। আর আসলে সে ভীতু না সাহসী তাও বোঝা কঠিন। সামান্য বিষয় যার মস্তিষ্কে ঢুকে না সেই প্রায় সময়েই অনেক বুদ্ধিমত্তার সাথে করে বের ফেলে বিভিন্ন জিনিস। আর ভুতের নাম শুনেই যে মুসা পারলে খাটের তলে ঢুকে বলতে গেলে সেই মুসাই বিপদের সময়ে হয়ে যায় চূড়ান্ত সাহসী। সবল দেহ এবং সাঁতারে দক্ষ মুসা আমান। প্রিয় কাজ খাওয়া। কিশোরের মুখ হতে শোনা বিভিন্ন বাংলা বুলি ঝাড়ে প্রায়ই। যেমন, তার মুদ্রাদোষ হলো কথায় কথায় "খাইসে!" বলা। সবল মাথায় গুঁতো একবার যে খেয়েছে সে চিরকাল মনে রাখে সে কথা। তার বাবা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান মিস্টার রাফাত আমান বিভিন্ন ছবির শ্যুটিংয়ে যন্ত্রপাতির তদারকির দায়িত্বে থাকেন।

রবিন মিলফোর্ড

তুলনার বিচারে রবিনই বেশি আমেরিকান। আইরিশ আমেরিকার রবিনের বাবা মিস্টার মিলফোর্ড একজন সাংবাদিক। রবিন একটি লাইব্রেরিতে পার্ট টাইম কাজ করে। বইয়ের পোকা রবিনের প্রধান কাজ হলো কেসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বিভিন্ন রেফারেন্স বই ঘেঁটে বের করা। রবিন বইয়ের পোকা হওয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে তার ভালো জ্ঞান। রবিন কোন এক অজানা কারণে প্রায় সকলের প্রিয় চরিত্র। কিন্তু গল্পে তার ভূমিকা খুবই কম রাখা হয়।
আপনারা হয়তো সবাই জানেন পৃথিবীর প্রথম গোয়েন্দা গল্প শার্লক হোমস। যার রচয়িতা স্যার আর্থার কেনান ডয়েল।  আর তার দেখানো পথ ধরে পরে লেখা হয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা কাহিনী। আর পৃথিবীর প্রথম কিশোর গোয়েন্দার কাহিনী হলো রবার্ট আর্থার জুনিয়রের "Alfred Hitchcock and the Three Investigators". তিন গোয়েন্দার প্রথম দিকে গল্পগুলো এর রূপান্তর। চরিত্র গুলো বেশিরভাগই এই গল্প থেকেই এসেছে। পরবর্তী পর্বগুলো বিভিন্ন বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে ও ধারাবাহিকতায় লেখা হয়েছে। আগস্ট ১৯৮৫ সালে এই সিরিজ শুরু হয়। এখন কিভাবে কোন চরিত্র, স্থান ইত্যাদি এলো তা জেনে নিই।

কিশোর পাশা

রবার্ট আর্থার জুনিয়রের জুপিটার জোনস চরিত্রটি বাংলা তিন গোয়েন্দাই কিশোর পাশা। যদিও জুপিটার জোনস ইংরেজ আর কিশোর পাশা বাঙালি তবুও চরিত্র দুটি একই। দুজনেই দুই গল্পের গোয়েন্দাপ্রধান, ঠোটেঁর নিচের দিকে চিমটি কাটার অভ্যাস আর বুদ্ধিমান। ইংরেজী দি থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের জুপিটার জোনসের পরিবর্তে রকিব হাসান এনেছেন এই চরিত্র।

মুসা আমান

দি থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের পেট ক্রেনশ এর চরিত্রে আছে মুসা আমান। যদিও এই দুইটি চরিত্রে মধ্যে ব্যাবধান আছে বেশ কিছু। মুসা আমানের চরিত্রটি একটি কিশোর যে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নিগ্রো। আর পেট ক্রেনশ একজন সাধারণ আমেরিকান। তিন গোয়েন্দার সহকারী গোয়েন্দা।

রবিন মিলফোর্ড

বব এন্ড্রুজ তিন গোয়েন্দায় রবিন মিলফোর্ড। বইয়ের পোকা বব যেমন লাইব্লেরিতে কাজ করে সেও তেমন। আইরিশ আমেরিকান রবিন আর বব এন্ড্রুজ নথি গবষেক।

রোলস রয়েস

বিলাশবহুল রোলস রয়েস গাড়িও এসেছে দি থ্রি ইনভেস্টিগেটরস থেকে।

হ্যানসন

রোলস রয়েসের শোফার হ্যানসন। এসেছে দি থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের ওর্থিংটন থেকে।

পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড

জুপিটার জোনসের চাচার জোনস স্যালভিজ ইয়ার্ড আর তিন গোয়েন্দার কিশোর পাশার চাচার পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড।

ডেভিস ক্রিস্টোফার

দি থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের আলফ্রেড হিচহকের শুধু নাম বদলিয়েই হয়েছে ডেভিস ক্রিস্টোফার।

কেরি অ্যান্ডারসন

বসি হেনরিয়েটা তিন গোয়েন্দায় হয়েছে মুরব্বী কেরি বা কেরি এন্ডারসন।

শুটকো টেরি

শুটকো টেরির ধারণাটা নেওয়া হয়েছে দি থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের স্কিনি নরিস থেকে।

 জরজিনা পারকার

তিন গোয়েন্দার বন্ধু জরজিনা পারকার কিন্তু দি থ্রি ইনভেস্টিগেটরস থেকে আসেনি। এসেছে এনিড ব্লাইটনের ফ্যামাস ফাইভ সিরিজের জর্জিনা জর্জ কিরিন থেকে।

আশা করি ভালোই লাগলো এই পরিচিত তিন গোয়েন্দাকে নতুন করে চিনতে।
ভলিউম ১
কেস ১
রবার্ট আর্থার জুনিয়রের "The Three Investigators" এর প্রথম কেস ছিলো দি সিক্রেট অব দি টেরর ক্যাসল। তিন গোয়েন্দারও প্রথম কেস সেটিই।
রকিব হাসান তিন গোয়েন্দা নামেই প্রথম পর্ব লিখেছিলেন। আর কোন নাম দেননি। পুরো ফ্রেশ অনুবাদ বলা যায়। খুব একটা পরিবর্তন নেই, শুধু নামগুলো ছাড়া।
রেন্ট এ রাইড কোম্পানীর একটি প্রতিযোগিতায় ৩০ দিনের জন্য রোলস রয়েস নামের এক অতি বিলাসবহুল গাড়ি জিতে নেয় কিশোর। তার উপর স্কুলে ছুটি। তাই সে তার দুই ঘনিষ্ট বন্ধুকে নিয়ে শুরু করে তিন গোয়েন্দার যাত্রা। তার চাচার স্যালভিজ ইয়ার্ডের একটি পুরনো নষ্ট ছাপার মেশিন ঠিক করে ফেলে কিশোর এবং মুসা কার্ড ছাপায় তিন গোয়েন্দার।
 
মানুষের মনে প্রশ্ন জাগানোসহ একাধিক কারণে তিনটি প্রশ্নচিহ্ন রাখে কার্ডে। কিশোরের জানা ছিলো একটি ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজছেন বিখ্যাত পরিচালক ডেভিড ক্রিস্টোফার। কিন্তু তার সাথে দেখা করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু কৌশলী কিশোর ঠিকই দেখা করে পরিচালককে রাজি করিয়ে ফেলেন তাদের কাজ দিতে। এরপর লেগে গেলো টেরর কেসল নামক এক ভূতুড়ে বাড়ির রহস্য উদঘাটনে। আবিষ্কার করলো সে বাড়ি নিয়ে প্রচারিত সব গুজব সত্য। সত্যি সেখানে দেখা যায় নীল ভূত, বেজে উঠে পাইপ অর্গান আর মস্তিষ্কের উপর কোনভাবে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া করে বাড়িটা। কিন্তু কিভাবে সম্ভব???
কেস-২

স্কেলিটন আইল্যান্ড বা বাংলায় কঙ্কাল দীপ। সুন্দর একটি দীপ। সেখানে ছিলো একটি সুন্দর পার্ক। অনেক আগে সেখানে ঝড়ের মধ্যে নাগরদোলায় চড়তে গিয়ে মারা গিয়েছিলো এক মেয়ে। তার ভূত দেখা গিয়েছিলো এমন গুজব আছে। নাগরদোলায় নাকি চড়তে দেখা যায় তাকে। বন্ধ হয়ে যায় পার্ক। কিন্তু মাঝখানে অনেকদিন দেখা যায়নি সেই ভূত। আবার ঘনঘন দেখা দিতে শুরু করে সেই ভূত।
ছবির শ্যুটিংয়ের একটি দলের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরি যাচ্ছে। গার্ড রেখে ঠেকানো যাচ্ছে না চুরি। সন্দেহ পাপালো হারকুস নামের এক গ্রেসান ছেলের উপর।
অনেক আগের এক জলদস্যুর মোহর ডুবে আছে অথবা লুকানো আছে সেখানে অথবা সমুদ্রে। হঠাৎ দু-একটা মোহর পাওয়া যায়। কিন্তু কোথায় গুপ্তধন দীর্ঘদিনেও পাওয়া যায়নি। এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে কঙ্কাল দীপে। কিন্তু রহস্যের সমাধান কি?
 কেস-৩
ভ্যারানিয়ার প্রিন্স শীঘ্র হওয়ার কথা দিমিত্রির, তিন গোয়েন্দার সমবয়সী। দূর্ঘটনাক্রমেই তার সাথে দেখা হয়ে যায় তিন গোয়েন্দার। এমনকি প্রিন্সের(যদিও প্রিন্স তখনো হয়নি, হবে) সাথে বন্ধুত্বও হয়ে যায়। প্রিন্সের বাবা ৮ বছর আগে মারা গেছেন। তারপর থেকেই ডিউক হয়ছেন রোজার। রোজারের ষড়যন্ত্র স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে। প্রিন্সকে সড়িয়ে দিতে চাইলো। প্রিন্সের একজন সহকারি ও বন্ধু, মরিডো চায় না রোজার ক্ষমতায় আসুক। সে চায় প্রিন্স দিমিত্রি তার অধিকারের সিংহাসন যেন পায়। ইউএস এমব্যাসি তিন গোয়েন্দাকে পাঠালো দিমিত্রির নিরাপত্তার জন্য।  কিন্তু অভিষেক হতে হলে যে রূপালী মাকড়সা লাগবে?? কোথায় গেলো ওটা? রবিন কি হারিয়ে ফেললো? তার ওপর তাদের সবার ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা! কিভাবে জনগণের কাছে পৌঁছাবে সতর্ক বার্তা? জানতে পুরোটা পড়ুন।
https://www.dropbox.com/s/jycymrnmnfc9jwj/volume1-1.rar?m
ভলিউম-১, ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন

0 Response to "তিন গোয়েন্দা: তিন গোয়েন্দার পরিচয় ও ভলিউম ১-১"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন